জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কোন রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষোভ নেই তাদের। তারা ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু যেসব ব্যক্তি অপরাধ করেছেন, তাদের শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া তিনি তার নিজ দলের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় সমাজ থেকে ভয়ের সংস্কৃতি দূর হবে বলেও প্রত্যাশা তার।
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুর ১২টায় গুলশানের গ্র্যান্ড হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির।
তিনি বলেন, অতীতে জাতিকে হাত–পা বেঁধে আটকে রাখা হয়েছিল; কথা বলতে দেয়া হয়নি। সাংবাদিকরাও চাইলে সত্য বলতে পারেননি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এখন সেই সময় নেই, পরিবর্তন হয়েছে। আসুন, সমাজের সবাইকে সাথে নিয়ে জাতীয় স্বার্থে এক হই। এই জায়গায় আমরা সমঝোতা করবো না। আপনাদের (সাংবাদিকদের) কলম মুক্ত হোক, চিন্তা স্বাধীন হোক। আপনারা যাতে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আমাদের দলের হয়ে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা যদি ক্ষমতায় আসি তবে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেবো; ধর্মের ভিত্তিতে কোনও মূল্যায়ন করা হবে না। সংখ্যালঘু শব্দটা দিয়ে সমাজকে বিভক্তি করা হচ্ছে, আমরা তার পক্ষে না। এই সংস্কৃতি উঠে যাক এটা আমরা চাই।’
বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে সাহায্য করেন; কিন্তু বাধ্য করবেন না। দেশের কোনও সিদ্ধান্ত দেশের মানুষই নেবে।’
সমাজ থেকে ভয়ের সংস্কৃতি দূর হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘শাসক যেন সমাজের কাউকেই দাস মনে না করে এমন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সমাজ থেকে ভয়ের সংস্কৃতি দূর করতে হবে।’
জামায়াতের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী অনেক আগে থেকেই গণমানুষের দল হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার হামলা, মামলা, নির্যাতন করেছে। কিন্তু সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। জামায়াত আবারও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে। মানুষও জামায়াতকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে। কিন্তু আমাদের এই পথচলায় যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, নির্ভয়ে আপনারা তা আমাদের ধরিয়ে দেবেন; আমাদের সমালোচনা করবেন।’
ডা. শফিকুর রহমান কথা বলেন নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতেও। অধিকার নিশ্চিতের জন্য কাজ করার সময়ই দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের ইস্যু পরিবর্তন করার জন্য সরকার আমাদের নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। ছাত্র আন্দোলন চাপা দেয়ার জন্য আমাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। তবে আমাদের কোন রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষোভ নেই; আমরা ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু যেসব ব্যক্তি অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘সরকার পতনের আন্দোলন শুধুমাত্র ছাত্রদের না; এতে রাজনৈতিক দলগুলোও ছিলো, সাধারণ মানুষও ছিলো। রাজনৈতিক দলগুলোর ১৫ বছরের আন্দোলন এবং ১৫ বছরের নির্যাতনের প্রতিফলন হয়েছে। তবে অবশ্যই ছাত্রদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়।’