Sunday, June 1, 2025
Homeসারাদেশগভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে, জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত

গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে, জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত

সারাদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ। এর প্রভাবে আজ শুক্রবার (৩০ মে) দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ উপকূলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন; বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাহাড়ধসের শঙ্কায় পার্বত্যাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছে প্রশাসন।

দুই দিন ধরে অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। দমকা হাওয়ায় বিপর্যস্ত উপকূলীয় জনপদের মানুষ। ঝড়ো হাওয়ায় বহু জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে।

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা জনপদ নোয়াখালী। জোয়ারের তোড়ে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার তিনটি নদীতীরবর্তী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও সড়ক হাটু পানির নিচে। চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে এ অঞ্চলে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাতিয়া ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে, দুই দিনের ঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলের জনপদও বিপর্যস্ত হয়েছে। কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে বরগুনার উপকূলীয় এলাকা। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে মানিকখালি ও উত্তর ডালভাঙা এলাকার বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হয়েছে কয়েকশ পরিবার।

এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় নাকাল ভোলার নদীতীরবর্তী মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকূলবাসী। ঝালকাঠিতেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে; ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীপারের সড়ক।

এক স্থানীয় নারী বলেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্ট করছি। এখন আমাদের থাকা-খাওয়ার জায়গা নেই। আরেক ব্যক্তি জানান, গতকাল ২০০ থেকে ২৫০ মহিষ নদীতে ভেসে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় কয়েকটি উদ্ধার করা গেলেও বাকিগুলোর খোঁজ নেই।

ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। ঢেউয়ের তোড়ে পতেঙ্গায় আছড়ে পড়েছে দুটি জাহাজ। এদিকে, বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়াসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল।

বৈরী আবহাওয়ায় পাহাড়ের নীল আকাশও এখন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। পাহাড়ধসের শঙ্কায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পার্বত্যাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের কিছু কিছু জেলায় আরও একদিন বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৯৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, “গতকাল বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি সমতল অতিক্রম করায় আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।”

শক্তিশালী সাইক্লোনের আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “সাগরে বায়ুতাড়িত বাতাস রয়েছে, যে কারণে প্রতিটি বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “দুই বিভাগ বাদে দেশের অন্যান্য কিছু অঞ্চলে গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।”

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৬ মি.মি.। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের মাইজদীকোর্ট এলাকায়— ২৮৫ মি.মি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চাঁদপুরে— ২৪১ মি.মি।

এছাড়াও, সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments