ভারতের হরিয়ানায় একটি গাড়ির ভেতর থেকে একই পরিবারের ছয় সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২৬ মে) রাতে পঞ্চকুলায় একটি পার্ক করা গাড়িতে তিন শিশুসহ ছয়জনের মরদেহ পাওয়া যায়। তারা সবাই বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে মঙ্গলবার (২৭ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারের সপ্তম সদস্য গাড়ির বাইরে বসেছিলেন এবং বলছিলেন, পরবর্তী পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনিও মারা যাবেন! অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে পরিবারটি ঋণগ্রস্ত ছিল।
মৃতরা হলেন, প্রবীণ মিত্তল (৪২), তার বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
একটি বাড়ির বাইরে পার্ক করা গাড়িটি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সন্দেহের জন্ম দেয়। পরে গাড়ির ভেতরে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে তারা দ্রুত তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান এবং পুলিশকে খবর দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে ৪২ বছর বয়সী প্রবীণ মিত্তল এবং তাদের পরিবার পঞ্চকুলার একটি অনুষ্ঠান থেকে দেরাদুনের বাড়িতে ফিরছিলেন বলে জানা গেছে। তারা বাগেশ্বর ধামে একটি আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। গভীর রাতে পরিবারের সদস্যরা বিষ পানে আত্মহত্যা করেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা রাতে হাঁটাহাঁটি করার সময় গাড়ির পেছনে উত্তরাখণ্ডের নম্বর প্লেট লাগানো একটি গাড়ি পার্কিং করতে দেখেন। প্রবীণ মিত্তল নামে একজন ব্যক্তি গাড়ির পাশে ফুটপাতে বসে ছিলেন।
স্থানীয় ওই বাসিন্দা জানান, তিনি এবং তার ভাই লোকটির কাছে গিয়ে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি জানান, পরিবারটি বাগেশ্বর ধাম থেকে ফিরছিল। যেহেতু তারা কোনো হোটেল খুঁজে পায়নি, তাই গাড়িতেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তাকে গাড়িটি বাজার এলাকায় সরিয়ে নিতে বলেন ওই বাসিন্দা।
লোকটি গাড়িটি সরাতে ভেতরে উঠার সময় স্থানীয় লোকটির মনে সন্দেহ হয় এবং তিনি ভেতরে উঁকি দিয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন। ছয়টি মৃতদেহ পড়ে আছে এবং গাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরও বলেন, ‘আমি ছয় জনকে শুয়ে থাকতে দেখেছি। তারা একে অপরের গায়ে বমি করেছিল। গাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। আমি লোকটিকে টেনে সরিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ব্যাপার কী? তারপর তিনি জানালেন, পরিবারটি আত্মহত্যা করেছে এবং তিনিও পাঁচ মিনিটের মধ্যে মারা যাবেন। লোকটি দাবি করেছিলেন, বিশাল ঋণের বোঝায় ডুবে আছেন।’
পরিবারের সদস্যদেরকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়রা জানান, অ্যাম্বুলেন্স সময়মতো পৌঁছালে লোকটিকে বাঁচানো যেত।
পুলিশ একটি সুইসাইড নোট পায়, যার বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে যে, পরিবারটি বড় ঋণ এবং আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিল।
ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।