Wednesday, May 28, 2025
Homeজাতীয়অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ক্রমেই বাড়ছে চাপ

অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ক্রমেই বাড়ছে চাপ

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, এমনকি সামরিক বাহিনীর দিক থেকেও একের পর এক দাবি ও প্রতিবাদের মুখে পড়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার।

সোমবার (২৬ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই এই সরকার এক অস্থির বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

রয়টার্স জানায়, সোমবার (২৫ মে) দেশটির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। তারা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

একই সঙ্গে সরকারি কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করছেন। টানা তিনদিন ধরে তারা বিক্ষোভ করে আসছেন।

কারণ, সরকার রোববার একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে, যার ফলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত করতে পারবে। কর্মচারীদের ভাষায়, এটি একটি ‘দমনমূলক’ উদ্যোগ।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণায় রাজস্ব কর্মকর্তারাও প্রতিবাদে নামে। তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও অনিশ্চয়তা ঘনিয়ে এসেছে। ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তার সরকার নানা মহলের চাপের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট সময়সূচি না থাকায় অসন্তোষ বাড়ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচন ও সংস্কারের পরস্পরবিরোধী দাবির মাঝে পড়ে গেছে। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছে।

এ পরিস্থিতির মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও ঘনীভূত হয় যখন ছাত্রনেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক শীর্ষ নেতা দাবি করেন— রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচনকালীন সময়সূচি নিয়ে একমত হতে না পারলে ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, ইউনূস এখনই সরে দাঁড়াচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাজ শেষ না করা পর্যন্ত কোথাও যাচ্ছি না।

অপরদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের পাশাপাশি সেনাবাহিনী থেকেও স্পষ্ট বার্তা এসেছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি এক বক্তব্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন, যা অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত সময়সীমার (২০২৬ সালের জুন) সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এই সংকট মোকাবিলায় ইউনূস তার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকেন এবং বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, ছাত্রনেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা এক ধরনের যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমাদের অস্থিতিশীল করার নানা চেষ্টাও চলছে। আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে, যার ফলে দলটি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ সিদ্ধান্তকে ঘিরেও রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি এক কঠিন সময়। একদিকে দ্রুত নির্বাচনের দাবি, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কার্যক্রম—এই দুই চাপের মাঝখানে পড়ে সরকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments