মানসিক চাপে ভুগছেন দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। এমন চাপ তাদের অনেককে ঠেলে দিচ্ছে ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে। কেউ কেউ আত্মহত্যাও করে বসছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই মানসিক চাপ ও হতাশার পেছনে অন্যতম কারণ ভবিষ্যৎ পেশাজীবন দুশ্চিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতা। প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পারার কারণে ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যৎ পেশাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
শুক্রবার ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ’ শিরোনামে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। জরিপে বলা হয়, প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হতাশার বিভিন্ন উপসর্গে ভোগেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের উপসর্গের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। প্রায় ৩২ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী সরকারি চাকরি করতে চান, প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। মাত্র ৭ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করতে চান। পেশাজীবন নিয়ে এখনই কোনো ভাবনা নেই প্রায় ২২ শতাংশ শিক্ষার্থীর।
জরিপটি চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত পরিচালিত হয়। দেশের ৮৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১ হাজার ৫৭০ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশ ছাত্রী ও ৪৮ শতাংশ ছাত্র।
৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন সহপাঠী ও জ্যেষ্ঠ সহপাঠীদের হাতে; এ হার প্রায় ৮৬ শতাংশ। প্রায় ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্ট। ৫৯ শতাংশ জানান, তারা মন খুলে কথা বলার মতো কোনো শিক্ষক পান না।
জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে কিন্তু চেষ্টা করেননি ৩৯ শতাংশ, আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে এবং উপকরণও জোগাড় করেছেন ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রায় ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় না। ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এ সম্পর্কে কিছু জানেন না।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে, শিক্ষার্থীরা কেন হতাশা এবং বিষণ্নতায় ভুগছে তা বোঝা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সদিচ্ছা দরকার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক, এডিডি ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্প) আবদুল্লাহ আল হারুন। সভাপতিত্ব করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ। জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগের সদস্য ফারজানা আক্তার